
ব্যাবেসিওসিস (Babesiosis)
কারণ:
ব্যাবেসিয়া ( Babesia ) নামক এককোষী জীবাণু আঠালীর সাহয্যে সংক্রমিত হয়ে এ রোগ সৃষ্টি করে ।
লক্ষণ:
♦ আক্রান্তের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে পশুর দেহের তাপ বৃদ্ধি পায় ( ১০৩০-১০৭০ ফা: ) এবং হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে।
♦ ক্ষুদামন্দা, দুর্বলতা ও অবসাদ ভাব দেখা দেয় ।
♦ রুমেনের গতি মন্থর ও দুধ উৎপাদন হ্রাস পায় ।
♦ এই প্রোটোজোয়া রক্তে লোহিত কণিকা ভেঙ্গে দেয় ( ইন্ট্রাভাসকুলার হেমোলাইসিস ) ফলে হোমোলাইটিক অ্যানিমিয়া দেখা দেয়। সে কারণে চোখের কনজাস্কটাইভা ফ্যাকাশে দেখায় ।
♦ রক্তে অত্যধিক লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে হেমোগ্লোবিন মুত্রের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে ( হোমোগ্লোবিনিউরিয়া ) ফলে মত্রের বর্ণ দুধ ছাড়া চা বা কফির মত দেখায় ।
♦ প্রথম প্রস্রাবে অনেক ফেনা হয় ।
♦ এ রোগে আক্রান্ত গর্ভবতী গাভীর গর্ভপাত হওয়ার তথ্য রয়েছে ।
♦ অ্যানিমিয়ার পরবর্তী পর্যায়ে জন্ডিস দেখা দেয় এবং এসময় চোখ হলুদ বর্ণের দেখায় ।
♦ প্রথম অবস্থায় প্রাণির শরীরে জ্বর হয় পরবর্তীতে শরীরে জ্বর থাকে না । সাধারণত আক্রান্ত পশুর রক্তে অক্সিজেন স্বল্পতায় ( Anaemic anoxia ) ৪ থেকে ৮ দিনের মধ্যে পশুর
মৃত্যু ঘটে ।
♦ মস্তিস্কের রক্তনালী আক্রান্তের ( সেরিব্রাল ব্যাবেসিওসিস ) ফলে স্নায়ুবিক উপসর্গ বিশেষ করে খিঁচুনি, পক্ষাঘাত ও অচেতনতা বা কমা দেখা দেয় । ঘোড়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী অন্ত্র প্রদাহ ও
পেটে তীব্র ব্যথা ( colicky pain ) থাকে ।
রোগ নির্ণয়:
১। দেহে আঠালীর আক্রমনে জ্বর আসার ইতিহাস ।
২। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ উপসর্গ যেমন- দেহে আঠালীর আক্রমনে জ্বর, অ্যানিমিয়া ও হেমোগ্লোবিনিউরিয়া উপসর্গ দেখে প্রাথমিকভাবে এ রোগ ধারণ করা যায় ।
৩। হৃৎস্পন্দন ও শ্বাসীয় গতি বৃদ্ধি এবং মূত্রের বর্ণ দুধ ছাড়া চা কিংবা কফির মত ইত্যাদি দেখে শনাক্ত করা যায় ।
৪। জিমাসা’স স্টেইন ( Giemsa’s stain ) দিয়ে পেরিফেরাল রক্ত স্মিয়ার স্টেইন করলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে লোহিত কণিকাকার মধ্যে ব্যাবসিয়ার জীবাণু ধরা পড়বে ।
৫। সিরোলজিকক্যাল টেস্টের ( LAT, CFT, IFAT, ELASA ) মাধ্যমে এ রোগে সিরো-প্রিভ্যালেন্স নির্ণয় করা যায় ।
৬। ব্যাবেসিওসিস রোগে মৃত পশুর প্লীহা স্ফীত থাকে এবং মূত্র থলিতে কালো বর্ণের মূত্র পাওয়া যাবে । এছাড়া হৃৎপিন্ড, ফুসফুস, বৃক্ক ও মস্তিস্কের স্মিয়ার জিমাসা’স স্টেইন করে ব্যাবেসিয়া
জীবাণু শনাক্ত করা যায় ।
চিকিৎসা:
Rx
(১) বেরিনিল Inj. Babcop ( Square )/ ( Berenil ) ইঞ্জেকশন ১০০-২০০ কেজি দৈহিক ওজনের প্রাণিকে ১০ মি.লি. মাংসপেশীতে দিলে প্রাণি দ্রুত আরোগ্য হয় ।অথবা,
ইঞ্জেকশন ব্যবিসন ( Techno ) ২ মি.লি. , প্রতি ১০০ কেজির জন্য ২ মি. লি. মাংসে ।
অথবা,
ইমিডোকার্ব ডাইপ্রোপায়োনেট ( Imidocarb dipropionate ) যেমন- Inj. Ectorid-10ml ( Renata )/ Inj. Babenil-10ml ( Techno ) Imizol®, UR ১.২ মি. গ্রাম/ কেজি হিসাবে ( ১২% সলুশন, ১.০ মি. লি. / ১০০ কেজি ) ত্বকের নিচে একবার ইঞ্জেকশন কার্যকর ।
অথবা,
অ্যারোমেটিক ডায়মিডিনস গ্রুপের ( Aromatic diamidines ) ঔষধের মধ্যে ডাইমিনাজেন অ্যাসিটেট ( Diminazene acetate ) ৪ মি. লি./ কেজি ব্যবহৃত এবং কার্যকর । যেমন- Berenil®, Hoechst ( ৬% সলুশন, ০.৮ গ্রাম / ১০০ কেজি ) ।
অথবা,
সুনির্দিষ্ট কোম্পানীয় ট্রেড ঔষধের অভাবে ৮-১২ গ্রাম অ্যালাম ( Alum ) এবং ১০-১৪ গ্রাম বোরিক এসিড, ২৫০ মি. লি. পানির সাথে মিশিয়ে দিনে তিন বার করে দুই দিন খাওয়ালে এ রোগ ভাল হয় ।
(২) যে কোন একটি এন্টিবায়োটিক ঔষধ যেমন- বড় প্রাণির জন্য ইঞ্জেকশন রেনামাইসিন বা অক্সিট্রেটা বা টেকনোমাইসিন যে কোন একটি ১০-১৫ মি. লি. মাংসপেমীতে দিতে হবে ।
প্রতিরোধ:
• রোগের বাহক আঠালীর নিয়ন্ত্রণ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায় । যেমন আঠালীর বাসস্থান চাষ করে, পুড়িয়ে ও আঠালীর পরিবেশ নষ্ট করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । ডিপিং ও স্প্রে এর মাধ্যমে কীটনাশক পদার্থ প্রয়োগ করে আঠালী নিধন করা সম্ভব ।
• ক্লিনিক্যাল কেসের সুষ্ঠু চিকিৎসা করে রক্তে জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।
• কেমোপ্রফাইল্যাক্সিসের ক্ষেত্রে প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ২-৫ মিলিগ্রাম হিসেবে ইমিজল ( Imizol, Pitman Moore Ltd. , England ) ত্বকের নিচে একবার ইঞ্জেকশন দিলে গ্রাম ১-২ মাস দেহে প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে ।
• এছাড়া ইরেডিয়েটেড ভ্যাকসিন ( Irradiated vaccine ) পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে ।
• প্রাণিকে প্রতি ৪ মাস পর পর Injection Ivermectin প্রিপারেশন ঔষধ প্রয়োগ করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।