
লাম্পি স্কিন ডিজিজ
(Lumpy Skin Disease)
কারণ:
এল. এস. ডি কারণ হলো- সিপ পক্স বা ক্যাপরিপক্স ভাইরাস যা গরু লক্ষণ প্রকাশ করে ।
রোগটি যেভাবে ছড়ায়:
• মশা, মাছি, আটালি এবং মাইটস এর মাধ্যমে রোগটি দ্রুত এক হতে অন্য প্রাণিতে ছড়ায় ।
• আকান্ত্র প্রাণির লালা, নাক থেকে নিঃসৃত পদার্থ, দুধ এবং আক্রান্ত প্রাণির সংস্পর্শের মাধ্যমেও রোগটি অন্য সুস্থ প্রাণিতে ছড়াতে পারে ।
• আক্রান্ত প্রাণি এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে পারে ।
• আক্রান্ত প্রাণি পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক, ভ্যাকসিন প্রদানকারীর মাধ্যমেও সুস্থ প্রাণিতে ছড়াতে পারে ।
• আক্রান্ত প্রাণির ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মাধ্যমেও অন্য সুস্থ প্রাণিতে ছড়াতে পারে ।
লক্ষণ:
♦ গরুর প্রথমে সমস্ত শরীরে অথবা কোন কোন অংশের চামড়া সামান্য উঁচু দেখায় অথবা কুঁচকে যায় এবং তা দেখতে গোলাকার বা বসন্তের মতো গুটি দেকা যায় ।
♦ আক্রান্ত হওয়ার ২-৩ দিনের মধ্যে গুটিগুলো ফেটে সেখান থেকে রস বা কষ বের হতে থাকে।
♦ গরুর শরীরে থাকা গুটিগুলো ঘায়ে পরিনত হয় ।
♦ এ সময়ে গরুর শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা ( ১০৩০-১০৬০ ফা: ) দেখা দেয় ।
♦ আক্রান্ত স্থানে কিছুটা ব্যথা থাকে ।
♦ গরুর পায়ে এবং নিম্নাংশে ফোলা দেখা যায় এবং প্রাণি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করে ।
♦ গরু খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয় ।
♦ অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় ।
♦ করীরের বসন্তের মতো গুটি ও চামড়া খসে পড়ে মাংস দেখা যায় ।
♦ অনেক সময় ক্ষস্থান পচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খসে খসে পড়ে ।
♦ এ সময় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশে ।
♦ গরু নিস্তেজ হয়ে পড়ে ।
♦ দ্রুত চিকিৎসা কিংবা রোগের লক্ষণ না জানার কারণে অনেক গরু মারা যায় ।
রোগ নির্ণয়:
রোগের ইতিহাস এবং প্রাণির শরীরে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ ও লক্ষণ দেখে সহজে চেনা যায় । তবে, অনেক সময় পক্স, এফ. এম. ডি, বোভাইন হারপিস ভাইরাস-২, হাইপারসেনসেটিভ প্রতিক্রিয়া, কীট- পতঙ্গের কামড় ইত্যাদির সঙ্গে অনেকটা মিল থাকে । তাই এ রোগটি যদি অন্যান্য রোগ থেকে পৃথক করতে হলে অবশ্যই আক্রান্ত স্থানের নমুনা ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপে দেখতে হবে অথবা ফ্লোরোসেন্ট অথবা ইমোনো পারঅক্সাইডেজ এ কালচার করে এল. এস. ডি নির্ণয় করতে হবে ।
চিকিৎসা:
Rx
একটি মাঝারী বা বড় গরুর জন্য-১. ইঞ্জেকশন নিরাভেট ১০, ১০০ মি.লি. ( Inj. Niravet 10ml, 100ml, SK+F )/ ইঞ্জেকশন এস্টাভেট ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Astavet 10ml, 100ml, ( ACME )/ ইঞ্জেকশন রেনাসিন ১০, ১০০ মি.লি. / Inj.Renacin ( Renata )/ ইঞ্জেকশন ফেনাড্রিল ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Phenadry1 ( ACME ) / ইঞ্জেকশন এন্টিহিস্টা ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Antihista / ইঞ্জেকশন হিস্টাভেট ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Histavet ( ACI )
নিয়ম: উপরের এন্ট্রিহিস্টামিন গ্রুপের যে কোন একটি ঔষধ ১০ মি.লি. মাংসে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে ।
২. ইঞ্জেকশন কিটো- এ ১০, ৩০ মি.লি. ( Inj. Niravet 10ml, 100ml, SK+F )/ ইঞ্জেকশন কোপভেট ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Astavet 10, 100ml ( ACME )/ ইঞ্জেকশন রেনাফ্লাম ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Renacin ( Renata )/ ইঞ্জেকশন কাইনোলভেট ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Phenadry1 ( ACME )/ ইঞ্জেকশন এন্টিহিস্টা ১০, ১০০ মি.লি. / Inj. Antihista / ইঞ্জেকশন এ পেন ১০, ১০০ মি.লি./ Inj. Histavet ( ACI )
নিয়ম: উপরের এন্টিইনফ্লামেটরি গ্রুপের যে কোন একটি ঔষধ ১০-১৫ মি.লি. মাংসে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে ।
৩. লাইসোভিট / ডিজ-ভিট
নিয়ম: চা চামচের ১-২ চা চামচ পানিতে গুলিয়ে অথবা জিহ্বায় লাগাতে হবে ।
৪. স্যালাইন- গ্লুকোলাইট/ রেনালাইট
নিয়ম: উপরের যে কোন স্যালাইন ১ গ্রাম ২০ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে । যদি গুটি ফেটে গিয়ে ঘা হয় তবে সেকেন্ডারী ব্যাকটেরিয়া দমনের জন্য নিম্নের এন্টিবায়োটিক দিতে হবে ।
৫. ইঞ্জেকশন ট্রাইজোন ভেট ১, ২ গ্রাম / ইঞ্জেকশন টপসেট ২ গ্রাম / ইঞ্জেকশন রেনাসেফ ২ গ্রাম/ ইঞ্জেকশন ট্রাইজেডভেট ১, ২ গ্রাম ।
নিয়ম: উপরের সেফট্রয়ক্সোন গ্রুপের যে কোন একটি ঔষধ ২ গ্রাম ১০ মি.লি. পরিম্রুত পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাংসে পর পর ৫-৭ দিন দিতে হবে ।
৬. পভিডন/ পভিসেফ/ পভিন ভেট/ সুমিভভেট/ সালফাভেট/ পিনকেস্প্রে ।
নিয়ম: উপরের যে কোন একটি ঔষধ আক্রান্ত স্থানে তুলা দিয়ে দিনে ৩-৪ বার লাগাতে হবে । মাঝে তরল জীবাণুনাশক ঔষধ লাগানোর পর সুমিডভেট অধবা সালফাভেট পাইডার দিনে ৩-৪ বার লাগাতে হবে অথবা তরল ঔষধ লাগানোর পর পিনকেস্প্রে দিতে হবে দিনে ৩-৪ বার ।
অথবা,
যেহেতু ভাইরাস দ্বারা এ রোগটি সৃষ্টি হয় কাজেই কোন এন্টিবায়োটিক এ রোগে কোন কাজ করে না, উপরোক্ত এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে প্রাণি দুর্বল হয়ে পড়ে ।
প্রতি ১০০-২০০ কেজি ওজনের প্রাণির জন্য নিম্নোক্ত চিকিৎসা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ অনেক ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে ।
১। প্যারাসিটামল ট্যাবলেট……………... ২টি
২। খাবার সোডা..…………………………... ৫০গ্রাম
৩। নিম পাতা বাটা…………………………. ২৫গ্রাম
৪। লবন………………………………………… ২৫গ্রাম
৫। গুড়…………………………………………… ৫০গ্রাম
ব্যবহার পদ্ধতি: উপরোক্ত উপাদান ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সকাল বিকাল ৭ দিন খাওয়ালে এ রোগ থেকে প্রাণি দ্রুত সেড়ে উঠে। তবে, ক্ষত হয়ে গেলে সালভাভেট বা সুমিডভেট পাওয়ার লাগাতে হবে ।
প্রতিরোধ:
লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসের এখনো পর্যন্ত কোন ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি । তবে নিম্নের
২টি পদ্ধতির যে কোন একটি ব্যকহার করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায় ।
১। গোট পক্স ভ্যাকসিন প্রাণির ওজনভেদে ৩ গুন বেশি হারে দেওয়া হলে এ রোগ প্রতিরোধ হয় ।
২। আক্রান্ত প্রাণি সুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে প্রতি ১০০ কেজি ওজনের
জন্য ১০ মি.লি. সুস্থ গরুর মাংসপেশীতে ৫-৭ দিন পর পর মোট ৩টি ইঞ্জেকশন প্রয়োগে
এ রোগ প্রতিরোধ হতে পারে ।
রোগ নিয়ন্ত্রণ:
• খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে ।
• খামারে জীব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ।
• খামার হতে মশা-মাছি তাড়াইতে হবে ।
• আক্রান্ত প্রাণিকে দ্রুত আলাদা করতে হবে ।
• খামারে প্রাণিকে মশারি ব্যবহার করতে হবে ।
• আক্রান্ত প্রাণিকে দ্রুত পৃথকভাবে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করতে হবে ।
• প্রাণির বাসস্থান জীবাণুনাশক ঔষধ যেমন- ফাম-৩০, ভিরকন, ভাইরোসিড, পভিডন, সভিসেভ যে কোন একটি ১ মি.লি. / ১০ লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে ছিটাতে হবে ।